বিশ্বগ্রাম ধারণার সাথে সংশ্লিষ্ট বা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত প্রধান প্রধান উপাদান সমূহ :

 

বিশ্বগ্রামের ধারনাটির সাথে বিভিন্ন উপাদান ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। প্রধান প্রধান উপাদান সমূহ নিচে দেওয়া হল-

যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা, অফিস, বাসস্থান, ব্যাবসা-বানিজ্য, সংবাদ, বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক বিনিময়।comunication.jpg

যোগাযোগঃ বর্তমানে সব থেকে শক্তিশালী এবং দ্রুততম যোগাযোগ ব্যবস্থা হলো ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ মাধ্যম। ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় মূহুর্তের মাঝেই পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে তথ্য আদান প্রদান করা যায়। ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে যোগাযোগ করার জন্যে অনেক মাধ্যম আছে, তার মাঝে সব থেকে জনপ্রিয় মাধ্যমগুলি হলো- ই-মেইল, টেলিকনফারেন্সিং,ভিডিও কনফারেন্সিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন : ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস ইত্যাদি।

কর্মসংস্থানঃ তথ্য-প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপি নানামুখী কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ইন্টারনেটের

ability
ব্যক্তিবর্গের সক্ষমতা

মাধ্যমে ঘরে বসেই বিশ্বব্যাপী কাজ করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই একদেশের মানুষ অন্য দেশের কাজ করে দিচ্ছে। এই ধরনের কাজগুলিকে আউটসোর্সিং বলে। অউটসোর্সিং এখন অনেক মানুষের পেশায় পরিণত হয়েছে। শুধু মাত্র ব্যক্তিগত ভাবে নয়, এখন প্রাতিষ্ঠানিক ভাবেও অনেক আউটসোর্সিং কোম্পানি গড়ে উঠেছে। আউটসোর্সিং এভাবে ধীরে ধীরে একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতি বছর আউটসোর্সিং করে কয়েক মিলিয়ন ডলার উপার্জন করে। বাংলাদেশের বেকার জনগোষ্ঠীর অনেকেই এই আউটসোর্সিংকে কাজে লাগিয়ে সাবলম্বি হয়েছে। এইসব আউটসোর্সিং কাজের আদান প্রদানের জন্যে গড়ে উঠেছে অনেক অনলাইন অফিস। যার ফলে খুব সহজেই কাজের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। আবার এই সব আউটসোর্সিং কাজের প্রশিক্ষণ দেবার জন্যে গড়ে উঠেছে অনেক প্রতিষ্ঠান।

শিক্ষাঃ গ্লোবাল ভিলেজের ধারনা থেকেই গড়ে উঠছে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা। তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে eduলাগিয়ে ইচ্ছে করলেই বাংলাদেশে বসে সারা বিশ্বের বইয়ের লাইব্রেরী গুলি হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা যায়। ঘরে বসেই পরীক্ষার ফলাফল জানা যায়। ঘরে বসেই বিশ্বের সেরা  গবেষণা কর্মের সাথে যুক্ত হওয়া যায়। ঘরে বসেই অনেক শিক্ষামূলক কর্মকান্ডের সাথে অংশগ্রহণ করা যায়। ইন্টারনেটে সার্চইঞ্জিন ব্যবহার করে খুব সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত খুঁজে বের করা যায়। অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন করা যায়। ঘরে বসেই বিশ্বের নামিদামি স্কুল কলেজে ক্লাস করা যায় যা ই-স্কুল নামে পরিচিত।

চিকিৎসাঃ চিকিৎসা ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের কারণে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজmedcin.jpg ঘরে বসেই উন্নত চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। মোবাইলফোন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব সহজেই স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে সাক্ষাত করা যায়। টেলিমেডিসিন

প্রযুক্তি ব্যাবহার করে একদেশে বসে অন্য দেশের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা যায়। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যাবহার করে ঘরে বসেই হাসপাতালে রোগী ভর্তি, সিট বরাদ্দ,বিলিং প্রসেস,হাসপাতাল হতে রিলিজ প্রভৃতি কাজ সম্পাদন করা যায়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যাবহারে মানুষের একদিকে যেমন অর্থ ও সময় অপচয় রোধ হচ্ছে তেমনি অন্য দিকে রোগ নিরাময় সহজতর হচ্ছে।

গবেষণাঃ তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে বিজ্ঞানীদের গবেষণা বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত হচ্ছে। এতে করে গবেষণা কর্ম 8061.png_860দিন-দিন সমৃদ্ধি লাভ করছে। গবেষণা কাজের জন্যে বিপুল পরিমাণ তথ্য ইন্টারনেট থেকে পাওয়া যায়।কোন গবেষণার জন্যে তথ্য সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে অনলাইনে গিয়ে সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে সার্চ করলেই বিষয়টি সম্পর্কে সব ধরনের ধারনা পাওয়া যায়। গবেষণা কাজে বিভিন্ন নতুন তথ্য সংগ্রহের জন্যে বিভিন্ন ওয়েবসাইট আছে। যেমন iee.org , acm.org , google.com, msn.com। তাছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে দূর-শিক্ষণের মাধ্যমেও বিভিন্ন গবেষণা কাজ পরিচালিত হচ্ছে।

অফিসঃ সাধারণ অর্থে অফিস হল একটি কর্মক্ষেত্র যেখানে অনেক মানুষ একত্রে কাজ করে। office.jpgকম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের কল্যাণে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন দূরত্বে থেকেও একত্রে দলগত ভাবে কাজ করতে পারে। তথ্য-প্রযুক্তি প্রয়োগ করে অফিসের যাবতীয় কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হচ্ছে। এই ধরনের প্রযুক্তি নির্ভর কার্যক্রমকে বলা হয় অটোমেশন। অফিস অটোমেশনের মাধ্যমে অফিসের কাজের দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা হয়। আধুনিক অফিস অটোমেশন মানেই হল কাগজকলম বিহীন অফিস যেখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে দ্রুততম সময়ে কাজ সম্পন্ন করা হয়।

 

বাসস্থানঃ বর্তমানে মানুষ স্মার্ট হোম গড়ে তুলেছে। স্মার্ট হোম এমন একটি বাসস্থান যেখানে মানুষ smarthome.jpgপ্রোগ্রামিং ডিভাইসের মাধ্যমে একটি বাড়ির হিটিং-কুলিং , লাইটিং, সিকিউরিটি প্রভৃতি সিস্টেম কন্ট্রোল করে। বাড়ির ভেতরের সকল ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী ডিভাইস হিসেবে অত্যাধুনিক মোবাইল ফোন বা রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করা হয়। স্মার্ট হোম পদ্ধতির মুলে রয়েছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং যা নির্দিষ্ট ডিভাইসের মেমোরিতে সংরক্ষিত থাকে। স্মার্ট হোম টেকনোলজি ব্যবহারে মানুষের জীবন যাত্রা আরো সহজতর হয়েছে।

 

ব্যবসা-বাণিজ্যঃ প্রযুক্তির কল্যাণে এখন গড়ে উঠেছে আধুনিক ব্যাবসা-বাণিজ্য। তথ্য-প্রযুক্তি ছাড়া businessআজকাল ব্যাংক,বীমা,ক্রেডিট কোম্পানি সহ অনেক কর্মকান্ডই অচল। ব্যাবসা বাণিজ্যের উন্নয়নের জন্যে চালু হয়েছে ই-কমার্স। ই-কমার্স একটি আধুনিক ব্যবসা পদ্ধতি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেনকে ই-কমার্স বলে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য বিক্রয়ের বিষয়টি সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করছে। বর্তমানে ই-কমার্স প্রযুক্তি পণ্যের মধ্যে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যই যোগ হয়েছে। ফলে মানুষ ঘরে বসেই কেনাকাটা করতে পারছে। এতে করে শ্রম অর্থ এবং সময় সবই সাশ্রয় হচ্ছে।

 

সংবাদঃ এই যুগে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের খবর মুহুর্তেই জানা যায়। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে ঘটে notun_somoy_11-2019-02-03-16-02-08.jpgযাওয়া ভিডিও চিত্র সাথে সাথেই ইন্টার্নেটে পাওয়া যায়। যেকোনো খবরের আপডেট প্রতিনিয়ত ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় সকল দৈনিক পত্রিকারই এখন অনলাইন ভার্সন আছে। ইচ্ছে করলেই ইন্টারনেট থেকে পুড়নো সংবাদ খুঁজে বের করা যাচ্ছে। ঘরে বসেই যোকোনো মহুর্তে আবহাওয়ার খবর জানা যাচ্ছে।  ফলে সংবাদের সহজপ্রাপ্ততা বাড়ছে। তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে খুব সহজে এবং অতি দ্রুততার সাথে সংবাদ প্রচারের কারণে মানুষের জীবনযাত্রা আরো সহজ হয়ছে এবং অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হচ্ছে।

বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগঃ তথ্য-প্রযুক্তি বিনোদন এবং সামাজিক যোগাযোগে বিশেষ ভূমিকা facebookরাখছে। যেকোনো ধরনের গল্প-কবিতা-উপন্যাসের বই অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। স্যাটেলাইটের পাশাপাশি এখন অনলাইনেও টিভি প্রোগ্রাম দেখা যাচ্ছে। বিনোদনের বিভিন্ন অডিও-ভিডিও, গেমস ইত্যাদির বিশাল সংগ্রহ আছে ইন্টারনেটে। মোট কথা বিনোদনের সব চাহিদাই এখন তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরন করা সম্ভব।

ইন্টারনেট এখন সামাজিক যোগাযোগের একটি বড় মাধ্যম। ইন্টারনেট ব্যাবহার করে মানুষ ফেসবুক/টুইটারের মাধ্যমে বিশাল সামাজিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। ফেসবুক/টুইটারের মাধ্যমে মানুষ খুব সহজেই একে অপরের কাছাকাছি আসছে। এই সব সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষ স্বাধীন ভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারছে।

সাংস্কৃতিক বিনিময়ঃ বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিনিয়তই সাংস্কৃতিক বিনিময় চলছে। স্যাটেলাইট এবং shambaইন্টারনেটের মাধ্যমে এক দেশের সাংস্কৃতি অন্য দেশের নাগরিক অবলোকন করছে। ফলে এক দেশের সাংস্কৃতি অন্যদেশের মানুষ গ্রহণ করতে পারছে। যার ফলে সাংস্কৃতির পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে। পুরনো সাংস্কৃতির পরিবর্তে নতুন নতুন সাংস্কৃতি মানুষের মাঝে ঢুকে পরছে। তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতির সাংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যাচ্ছে।